শরীয়তপুর জেলায় পানীয় জলে আর্সেনিকের ভয়াবহ মাত্রা ধরা পড়েছে। সাম্প্রতিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, জেলার প্রায় ২৬ হাজার ৪২৯টি অগভীর নলকূপে সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি আর্সেনিক রয়েছে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী পানিতে প্রতি লিটারে সর্বোচ্চ ০.০৫ মিলিগ্রাম আর্সেনিক সহনীয়। কিন্তু শরীয়তপুরে অনেক নলকূপে ০.১ মিলিগ্রাম পর্যন্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে, যা দ্বিগুণেরও বেশি।
সিভিল সার্জন আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ্ পরান জানান, নিয়মিত এই পানি পান করলে আর্সেনিকোসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি লিভার, ফুসফুস ও কিডনি বিকল হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে পান করলে ক্যানসারও হতে পারে। তিনি বলেন, “আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষকে এসব নলকূপের পানি পান না করার পরামর্শ দিচ্ছেন।”
নলকূপ পরীক্ষা ও চিহ্নিতকরণ
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় মোট ১ লাখ ৪২ হাজার ২৬৩টি নলকূপ রয়েছে। ২০২২–২৩ অর্থবছরে ‘আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্প’ এর আওতায় এগুলোর পানি পরীক্ষা করা হয়। কাজটি সম্পন্ন করেন প্রায় ১ হাজার ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক। যেখানে আর্সেনিকের মাত্রা অসহনীয় পাওয়া গেছে, সেই নলকূপগুলোকে লাল রঙে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা
সদর উপজেলার আড়িগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মোতালেব মিয়ার বাড়ির নলকূপেও আর্সেনিক ধরা পড়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের আর কোনো নলকূপ নেই। তাই প্রতিবেশীর গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছি।”
কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক জানান, অতিরিক্ত আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের পানি পান করা বিপজ্জনক হলেও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা যায়। তবে এসব নলকূপ পর্যায়ক্রমে অকেজো করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েলের পরিচিতি
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক দূষণ একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবিলায় সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা টিউবওয়েলের পানি পরীক্ষা করে নিরাপদ ও অনিরাপদ টিউবওয়েল চিহ্নিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ছবিঃ ইউনিসেফ বাংলাদেশ এর সৌজন্যে
পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে—
সবুজ রঙের টিউবওয়েল: আর্সেনিক সহনীয় মাত্রার নিচে, অর্থাৎ পানযোগ্য ও নিরাপদ।
লাল রঙের টিউবওয়েল: আর্সেনিক সহনীয় মাত্রার ওপরে, অর্থাৎ অনিরাপদ ও খাওয়ার অযোগ্য।
তবে শুধুমাত্র রঙ দেখে নিশ্চিত হওয়া যথেষ্ট নয়। সময়ের সাথে পানির মান পরিবর্তিত হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট সময় পরপর টিউবওয়েলের পানি পুনরায় পরীক্ষা করা জরুরি।
সবুজ রঙকৃত টিউবওয়েল সাধারণত আর্সেনিকমুক্ত বলে ধরা হয়, তবে নিরাপত্তার জন্য নিয়মিত পরীক্ষার বিকল্প নেই।