• রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম
আওনা ইউনিয়নে ভিজিএফের চাল বিতরণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ৬ জামালপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযান: অস্ত্রভাণ্ডারসহ এক ব্যক্তি গ্রেফতার ভিপি নুরের ওপর হামলা: সীমাহীন লোভই সর্বনাশের মূল — ডাঃ পিনাকী ভট্টাচার্য কাকরাইল সংঘর্ষ : রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের নতুন অগ্নিস্ফুলিঙ্গগুরুতর আহত নুরুল হক নুর পরীমনির নতুন প্রেমের গুঞ্জন: প্রেমিক কে? ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি থেকে লতিফ সিদ্দিকী আটক ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ১২টি জে-১০সি যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ দিবস আজ শরীয়তপুরে সাড়ে ২৬ হাজার নলকূপে আর্সেনিকের ভয়াবহ মাত্রা

পিনাকী ভট্টাচার্যের দাবি: ‘মুক্তিযুদ্ধে নিহত সর্বোচ্চ দুই হাজার, এক কোটি শরণার্থীও মিথ’

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধকালীন নিহতের সংখ্যা ও শরণার্থীর পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন আলোচিত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও প্রবাসী লেখক ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য। তার দাবি, প্রচলিত ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা ও এক কোটি শরণার্থীর বর্ণনা “অত্যন্ত অতিরঞ্জিত” এবং “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক প্রোপাগান্ডা”।

রবিবার (১৭ আগস্ট) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক দীর্ঘ বক্তব্যে পিনাকী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নিহতের সংখ্যা সর্বোচ্চ দুই হাজার। তার মতে, তৎকালীন পুলিশের নথিপত্রে কেবল ২ হাজার নিখোঁজ বা নিহতের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল।

শরণার্থী সংখ্যা প্রসঙ্গে দাবি

১৯৭১ সালে এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল—এই প্রচলিত দাবিকে সরাসরি অস্বীকার করেন পিনাকী। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্রেম নাথ হুনের ১৯৯৯ সালের এক সাক্ষাৎকার উদ্ধৃত করে বলেন, প্রকৃত শরণার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৯ হাজার।


তার বক্তব্যে উঠে আসে, ভারত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহানুভূতি ও সাহায্য আদায়ের কৌশল হিসেবে শরণার্থীর সংখ্যা অতিরঞ্জিত করেছিল। “একজন শরণার্থীর বিপরীতে যদি তারা ১০০ জনের হিসাব দেখায়, তবে বাড়তি ত্রাণ ও সহায়তা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারবে”—এমন অভিযোগও করেন তিনি।

শেখ মুজিবের ‘ভুল উচ্চারণ’

শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির উৎপত্তি সম্পর্কে পিনাকীর দাবি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিদেশি সাংবাদিককে নিহতের সংখ্যা ‘থ্রি হান্ড্রেড থাউজ্যান্ড’ (তিন লাখ) বলতে গিয়ে ভুল করে ‘থ্রি মিলিয়ন’ (ত্রিশ লাখ) বলে ফেলেন। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম যাচাই-বাছাই ছাড়াই সেই সংখ্যাকে প্রচার করতে থাকে।

তার ভাষ্য, “সাংবাদিকতার একটি বড় দুর্বলতা হলো একবার প্রকাশিত সংখ্যা যাচাই না করে অন্যরা কপি-পেস্ট করে। ফলে ভিত্তিহীন এই সংখ্যা ইতিহাসের সত্যে পরিণত হয়েছে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন ও গবেষণার উদ্ধৃতি

পিনাকী ভিডিওতে একাধিক গবেষক ও প্রতিবেদকের মতামত তুলে ধরেন।

তিনি আমেরিকান সাংবাদিক উইলিয়াম ড্রামন্ডের দ্য গার্ডিয়ান–এ প্রকাশিত ১৯৭২ সালের একটি রিপোর্ট উদ্ধৃত করেন। সেখানে বলা হয়েছিল, “৩০ লাখ নিহতের সংখ্যা এতটাই অতিরঞ্জিত যে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।”

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা রিচার্ড সিসন ও লিওনার্ড রোজের বই War and Secession: Pakistan, India and the Creation of Bangladesh–এর উল্লেখ করেন তিনি। বইটিতে লেখকরা ভারতীয় নীতি নির্ধারকদের সাক্ষাৎকার নিয়ে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ও ভিন্ন ভিন্ন মত তুলে ধরেছেন।

পিনাকীর মতে, এসব তথ্য-প্রমাণ থেকে বোঝা যায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা কয়েক হাজারের বেশি নয়।

সামরিক যুক্তি

পিনাকী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে সর্বোচ্চ তিনটি ডিভিশন মোতায়েন করেছিল—১৪, ১৬ ও ৯ ডিভিশন। তার যুক্তি, এত সীমিত সংখ্যক সেনা দিয়ে নয় মাসে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করা অসম্ভব।

তুলনা টেনে তিনি উল্লেখ করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানি বিশাল লজিস্টিক ও শিল্পশক্তি নিয়েও পাঁচ বছরে ছয় মিলিয়ন ইহুদিকে হত্যা করেছিল। অপরদিকে, পাকিস্তানের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশ মাত্র কয়েক মাসে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করেছে—এমন দাবি “যুক্তির বাইরে”।

ভারত ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ

পিনাকী অভিযোগ করেন, ভারত ও আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনাকে বিকৃত করেছে।

তার দাবি,

মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির জন্য ভারত অতিরঞ্জিত গণহত্যা ও শরণার্থীর বয়ান প্রচার করেছে।

আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে এই বয়ান ব্যবহার করেছে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহানুভূতি অর্জনের জন্যও ভারত এই প্রচার চালিয়েছে।

তার ভাষায়, “অতিরঞ্জিত নিহতের সংখ্যা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল যাতে মুসলমানরা একে অপরকে ঘৃণা করে এবং ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে।”

নতুন তদন্ত কমিশনের প্রস্তাব

ভিডিওতে পিনাকী যুদ্ধকালীন হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “সম্মানিত সামরিক ও শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে মাঠ পর্যায়ের জরিপ হলে প্রকৃত নিহতের সংখ্যা বেরিয়ে আসবে। তাতে স্পষ্ট হবে ভারতীয়-আওয়ামী প্রোপাগান্ডা।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা

শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন নয়। এর আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও ২০১৫ সালে বক্তব্য দিয়েছিলেন যে, মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে “বিতর্ক আছে”। তখন আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়।

পিনাকীর সাম্প্রতিক বক্তব্য নতুন করে সেই বিতর্ক উসকে দিচ্ছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

 


এই বিভাগের আরোও