কালের সাক্ষী হয়ে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার যোগীর ঘোপা নামক স্থানটি।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি বিশাল গাছ বা গাছের সমষ্টি, যা জলাশয়ের মাঝে একটি দ্বীপের মতো স্থানে অবস্থিত।
এই স্থানটি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার যোগীর ঘোপা নামে পরিচিত। “কালের সাক্ষী” কথাটি ইঙ্গিত করে যে এই স্থানটি দীর্ঘদিনের পুরনো এবং এর একটি ঐতিহাসিক বা ঐতিহ্যবাহী গুরুত্ব রয়েছে।
ছবিঃ উইকিপিডিয়া
গোপালপুরের “যোগীরঘোপা”: ইতিহাস, কিংবদন্তি ও অলৌকিক কাহিনী
টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলায় অবস্থিত যোগীরঘোপা একটি ঐতিহাসিক ও অলৌকিকভাবে প্রসিদ্ধ স্থান। লোকমুখে প্রচলিত নানা ঘটনা এবং কিংবদন্তি আজও এই জায়গাটিকে “কালের সাক্ষী” হিসেবে পরিচিত করেছে।
—
১. ইতিহাস ও প্রাচীন পরিচয়
যোগীরঘোপা মূলত রাজা যশোধরের গ্রীষ্মকালীন বসবাসের এলাকা ছিল।
ধারণা করা হয়, সম্রাট শাহজাহানের সৌজন্যে মোঘল সাম্রাজ্যের বাইরে রাজা যশোধর তার সাম্রাজ্য স্থাপন করেন।
রাজা যশোধরের প্রথম রাজধানী ছিল ফলদা, দ্বিতীয় রাজধানী ছিল মধুপুরের গোলাবাড়ি গ্রাম।
ফলদা থেকে যোগীরঘোপা পর্যন্ত একটি রাজপথ তৈরি করা হয়েছিল, যা রাজন্যবর্গের যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হতো।
—
২. অলৌকিক ঘটনা ও কিংবদন্তি
লোকমুখে শোনা যায়, শুকনা ও বর্ষার মাসে এই স্থানটি পানির উপর ভেসে থাকতো।
অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে বাসন-কোসনের জন্য নগ্ন গায়ে প্রার্থনা করলে তা সাথে সাথে পাওয়া যেত, তবে অনুষ্ঠান শেষে তা ফেরত দিতে হতো।
একবার কেউ বাসন নিয়ে সাকুল্য বাসন ফেরৎ না দেয়ায় পরবর্তী সময়ে আর বাসন পাওয়া যায়নি।
—
৩. সামাজিক ও বাণিজ্যিক প্রভাব
যোগীরঘোপা জঙ্গলাকীর্ণ থাকায় সন্নাসী বিদ্রোহ ও ধনসম্পদ লুকানোর জন্য আদর্শ স্থান ছিল।
ধনসম্পদ ও মূল্যবান সামগ্রী নৌকায় ব্রহ্মপুত্র নদী পারি দিয়ে এখানে আনা হতো।
হেমনগরের জমিদার পরবর্তীতে এখান থেকে অনেক মূল্যবান সম্পদ উদ্ধার করেছিলেন।
—
৪. স্থানীয় আধ্যাত্মিক প্রথা
আজও মানুষ এখানে মনোবাসনা পূরণের জন্য আগরবাতি, মোমবাতি ও মিষ্টি নিয়ে আসেন।
বর্তমানে জঙ্গলাকীর্ণ এই স্থান পীরবাবা ও গাজাখোরদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে, যেখানে অনেকে আধ্যাত্মিক ক্রিয়াকলাপে অংশ নেন।
—
যোগীরঘোপা কেবল একটি ঐতিহাসিক স্থান নয়, এটি গোপালপুরের লোককথা, আধ্যাত্মিকতা এবং প্রাচীন রাজকীয় ইতিহাসের মেলবন্ধন। রাজা যশোধরের শাসন, মোঘল যুগের প্রভাব, অলৌকিক ঘটনা ও লোকমুখে প্রচলিত কিংবদন্তি—সব মিলিয়ে এটি স্থানীয় ইতিহাসের জন্য একটি মূল্যবান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।